Monday 9 February 2015

বিশ্বাসঘাতক নেকড়ে

একদা এক গ্রামে এক চাষী ছিল। তার নাম ছিল পাঁচু। পাঁচু ছিল বড়ই দয়ালু ছিল। কারো দুঃখ সে সহ্য করতে পারত না । কেউ বিপদে পড়লে, অমনি সে বাঁচাতে ছুটে যেত।
একদিন হয়েছে কি পাঁচু যখন ক্ষেতে বড় বস্তা নিয়ে আলু তুলতে যাচ্ছিল তখন সে হটাৎ দেখতে পেল পাশের বন থেকে একটা নেকড়ে ছুটতে ছুটতে তার পায়ে এসে পড়ল। অনেক কাকুতি মিনতি করে সে বলল - আমাকে বাঁচাও পাঁচুভাই, তিনটি শিকারী আমার পিছু নিয়েছে।
দয়ালু পাঁচু বললে - তাই তো কিন্তু তোমাকে বাঁচাই কি করে বলো তো?
নেকড়ে বললে – তোমার ঐ বস্তাটায় আমায় পুরে ওর মুখ বন্ধ করে দাও ।

শিকারীরা এলে বলবে বস্তায় আলু আছে। তারপর শীকারীরা চলে গেলে মুখ খুলে দিও।
দয়ালু পাঁচু নেকড়ের কথামতো তাকে বস্তায় ভরে মুখ বন্ধ করে বসে রইল। তারপর শিকারীরা যখন নেকড়ের খোঁজ করল তখন পাঁচু বলল- সে কোন নেকড়ে দেখেনি।
শিকারীরা বস্তার দিকে তাকাতে পাঁচু বলল – বস্তায় আলু আছে।
শিকারীরা তার কথা শুনে চলে গেল । পাঁচু কিছুক্ষন অপেক্ষা করে যখন নিরাপদ বুঝল তখন বস্তার মুখ খুলে নেকড়েকে ছেড়ে দিল।
ছাড়া পেয়ে নেকড়ে কৃতজ্ঞতায় গদগদ হয়ে বলল – তুমি মহান লোক। এবার তুমি আমাকে আর একটা বিপদ থেকে বাঁচাও।
পাঁচু বলল – বলো কি বিপদ? নিশ্চই আমি বাঁচাবার চেষ্টা করব।
নেকড়ে তখন বলল – আমার বড় ক্ষিদে পেয়েছে । আমি তোমাকে খেতে চাই । তোমাকে খেতে আমাকে সাহায্য করে আমার প্রান বাঁচাও।
পাঁচু বলল – তা কি করে হয়?
আমাকে খেলে তো আমি মরে যাবো।
নেকড়ে সে কথা শুনবে কেন ? পাঁচুর কোন কথায় কান না দিয়ে সে তার ওপর চিড়াও হল।
এমন সময় লাঠি হাতে আর এক জোয়ান চাষী সেখানে এসে হাজির পাঁচু তাকে দেখে বলল – আমাকে বাঁচাও, নেকড়েটা আমায় খেতে চাইছে অথচ ওকে আমি বিপদ থেকে বাঁচিয়েছি।
জোয়ান চাষী নেকড়ে কে ধমকে বলল – উপকারীকে খেতে চাও কেন?
নেকড়েটা ছিল খুবই দুষ্ট। সে কৌসল করে বলল – একথা ঠিক যে পাঁচু আমাকে বস্তায় ভরে শিকারীদের হাত থেকে বাঁচিয়েছে, কিন্তু বস্তায় ভরার সময় সে আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। তাছাড়া বস্তার মুখ এমন শক্ত করে বেঁধেছিল যে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। তাই আমি পাঁচুকে খাবো। কেন খাবো না , তুমিই বিচার করে বল।
জোয়ান চাষী দয়ালু পাঁচুকে জানতো । সে বুঝল নেকড়েটা চালাকি করে পাঁচুকে খেতে চাইছে। তাই সে বুদ্ধি করে নেকড়েকে বলল – কিভাবে তোমাকে বস্তায় কষ্ট করে ভরেছিল আর তার মুখটা কত শক্ত করে বেঁধেছিল সেটা আর একবার করে দেখাও তো। সেটা দেখেই তবে তো বলতে পারবো পাঁচুকে তোমার খাওয়া উচিৎ কিনা ।
নেকড়ে ভাবল এ আর এমন কি কঠিন কাজ! সে আবার বস্তায় ঢোকার জন্য তৈরি হলো। আর পাঁচু তাকে আগের মতোই ঠেলে ঠুলে বস্তয় ঢুকিয়ে দিল। তারপর আগের মতোই বস্তার মুখ শক্ত করে বেঁধে দিল।
এবার জোয়ান চাষী হাতের লাঠি দিয়ে বস্তায় ভরা নকড়েকে উত্তম মধ্যম পেটাতে শুরু করে দিল।
দয়ালু পাঁচু বলল – আরে করো কি করো কি? নেকড়েটা যে মরে যাবে!
জোয়ান চাষী বলল – উপকারীকে যে খেতে চায় সেই বিশ্বাস ঘাতকে কখনও বাঁচিয়ে রাখতে নেই।

উপদেশঃ উপকারীর যারা অপকার করে তাদের উচিৎ শিক্ষা দিতে হয়।