Monday 22 December 2014

এভাবেই হয়তো আবার গল্পের শুরু

একটি চেরি গাছের সদ্য গজানো পাতা, যার রঙটা এখনও পুরোপুরি লাল হয়নি। অনেকগুলো লাল রঙের পাতার ভিড়ে সদ্য গজানো হলুদ রঙের ছোট্ট পাতাটি বেশ নজর কাড়ছিল। চারদিকের সবুজের মাঝে লাল রঙের গাছটি অদ্ভুত সৌন্দর্যের আবরণ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনেককাল ধরে। বৃদ্ধ পাতারা ঝরে পড়ে তবুও গাছটি ঠিক দাঁড়িয়ে থাকে নিজের স্বত্বা নিয়ে। হারানোর ব্যথা তো মানুষও সময়ের সাথে সাথে ভুলে যায়, একটা গাছ তো সেখানে নস্যি।
তাই নতুন একটা পাতার আগমনে গাছের সব পাতা উৎসব করে। বাতাসের গানের তালে তালে সমস্ত পাতা গা ভাসিয়ে দেয়, নতুন পাতাটিও যোগ দেয় আনন্দ উৎসবে। এই নতুন সদস্যের নাম দেওয়া হয় অরোরা।

আর এভাবেই হয়তো একটি গল্পের শুরু.............

সময়ের সাথে সাথে অরোরা বেড়ে উঠে। সখ্য গড়ে তুলে অন্য সকল পাতার সাথে। বাতাসের সাথে বন্ধুত্ব হয় সবার আগে। প্রতিদিন একবার করে বাতাস এসে গান শুনিয়ে যায় আর সকল পাতা আনন্দে গা ভাসায়। মাঝে মাঝে বাতাস এসে চুপটি করে শুধু অরোরাকে গান শুনিয়ে যায়। নানা রঙের নানা রকমের পাখির আনাগোনা হয় প্রতিটি সকালে আর কোন এক অদ্ভুত কারণে তাদের সাথে অরোরার বন্ধুত্ব হয় বেশি। হয়তো অরোরার টানেই পাখির আনাগোনা বেড়ে যায় হঠাৎ করে। দিনগুলো খুব ভালো যাচ্ছিল অরোরার। হাওয়া,পাখি,গাছের অন্যান্য পাতাগুলো,বিকেলের মিষ্টি রোদ সবাই অনেক পছন্দ করে অরোরাকে। দিন বাড়ার সাথে সাথে গায়ের রঙটা আরও লাল হয় অরোরার। বিকেলের মিষ্টি রোদ এসে যখন ছুঁয়ে যায় গাছটিকে প্রতিটি পাতা যেন নতুনভাবে সজীব হয়ে উঠে,প্রতিটি পাতার রঙ আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠে। ঠিক এই সময়টাতে এসে পৃথিবীতে তৈরি হয় একটুকরো স্বর্গের সৌন্দর্য।

প্রকৃতির নিয়মেই একসময় শীতের আগমন ঘটে। পাতাদের মনে আশংকা জাগে ঝরে পড়ার। বাতাস তার আনাগোনা কমিয়ে দেয়। আর যখন আসে তখন আর আগের মতো গান করে না। বাতাস এখন আসে সতর্ক করে দিতে। তার সবচেয়ে বেশি চিন্তা থাকে তার প্রিয় বন্ধু অরোরাকে নিয়ে। তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটিকে যেভাবেই হোক আগলে রাখতে হবে। পাখিরাও নিয়মিত এসে অরোরাকে সতর্ক করে, কখনও কখনও তাদের ডানা দিয়ে আগলে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করে। অরোরার জন্য সবার যেন খুব মায়া পড়ে গেছে। গাছের অন্যান্য পাতাগুলো নিজেদের নিয়েই ব্যাস্ত থাকে। অরোরাকে সাবধান করার মতো সময় তাদের থাকে না। এত যত্ন সত্ত্বেও অরোরাকে ধরে রাখা সম্ভব হয় না। প্রকৃতির অবধারিত নিয়ম অনুযায়ী অরোরা ঝরে পড়ে। তার সাথেই থেমে যায় বাতাসের নিত্যদিনের গান। কমে যায় পাখিদের নিত্যদিনের আনাগোনা।

গাছের নিচে,পথের ধারে,ঝরে পড়ে থাকা অনেক পাতার ভিড়ে পরে থাকে সবচেয়ে গাড় লাল রঙের পাতাটি,একা হয়ে,তার প্রিয় সব বন্ধু বাতাস আর পাখিদের চোখের আড়াল হয়ে।

আর এভাবেই হয়তো একটি গল্পের শেষ.............

হঠাৎ একদিন তরুন তরুণীর এক যুগল আসে সেই পথে। হাঁটতে হাঁটতে, পথে তরুণের চোখ গিয়ে পরে গাছের নিচে কিছুটা বিবর্ণ হয়ে পড়ে থাকা গাড় লাল পাতাটির উপর। খুব যত্ন করে সেটি হাতে তুলে নেয় সে। তারপর তুলে দেয় পাশে হাঁটতে থাকা তার প্রিয় মানুষটির হাতে। ভীষণ খুশি হয় তরুণী আর তারপর ব্যাগ থেকে একটা বই বের করে তার পৃষ্ঠার ভাঁজে যত্ন করে রেখে দেয় পাতাটি। তারপর হাত ধরে দুজনে আবার একসাথে হাঁটতে থাকে নির্জন রাস্তা ধরে। বইয়ের ভাঁজে থেকে অরোরা ভাবে হয়তো এটাই সময় তার প্রিয় বাসস্থানকে বিদায় জানানোর, আর কোনোদিন হয়তো পাখিদের সাথে দেখা হবে না আর কোনোদিন হয়তো বাতাসের গান শোনা হবে না। কাদের সাথে যাচ্ছে সে? কোথায় যাচ্ছে সে? তাদের নাম কি? তারা কি জানে অরোরার নামটা?

কিছুই জানে না অরোরা। সে শুধু এটুকু বুঝতে পারছে, নিজের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা ছেড়ে সে চলে যাচ্ছে অজানা কোন এক গন্তব্যে,অজানা এক পরিবেশে।

আর এভাবেই হয়তো আবার গল্পের শুরু.............


লিখেছেন - সত্যজিৎ রায়