Wednesday 10 December 2014

একটি ভূতের গল্প Eti Ekti Bhooter Galpo

প্রায় একমাস ছুটি কাটিয়ে কলেজে পৌঁছাবার পর রাতেরবেলা আমাদের গল্প যেন আর ফুরাতেই চাইতোনা! একেজনের পেটে কত কথা! কার চুল কতো সে.মি বড় হলো এই ব্যপারে নিরীক্ষামূলক প্রতিবেদন উপস্থাপন থেকে শুরু করে ছুটিতে টিভিতে দেখে আসা বিজ্ঞাপনের মডেলদের অঙ্গভঙ্গি অনুকরণ- নানারকম আলোচনায় গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকি আমরা। সেবারও ব্যতিক্রম হয়নি, ব্যাগ থেকে জিনিসপত্র বের করে লকারে গুছিয়ে রাখতে রাখতে অনর্গল বকে যাচ্ছি। তখনই মৌসুমি ব্যাগ থেকে একটা কি যেন ক্রিমের টিউব বের করে আমাদের সবাইকে দেখিয়ে সেটার গুণকীর্তন করতে লাগলো, এইটা মাখলে নাকি একমাসের মধ্যে বিশিষ্ট অভিনেতা হাসান মাসুদও টম ক্রুজের মতো হয়ে যাবেন!  ওর কথা শুনে মাইকেল জ্যাকসনের জন্য মনটা হু হু করে কেঁদে উঠলো। আহারে বেচারা, খামোকাই বারবার প্লাস্টিক সার্জারি করতে গিয়ে মরলেন। তাম্মি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো এইরকম একটা
ক্রিম কিনে সে মিশেল ওবামাকে পাঠিয়ে দিবে, একমাসের মধ্যে গ্রিনকারড পেয়ে যাবার কথা ভেবে আনন্দে ওর মুখ ঝলমল করতে লাগলো। :goragori:  ব্যবসায়িক বুদ্ধিটা ইরার বরাবরই ভালো, আফ্রিকায় এই ক্রিম রপ্তানি করে যে আমরা অচিরেই মহিলা বিল গেটস হয়ে যাচ্ছি এই ব্যপারটা যখন সে আমাদের প্রায় বিশ্বাস করিয়ে এনেছে ঠিক তখনই বেরসিকের মতো বাদ সাধলো লোডশেডিং।  তাম্মি চরম বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল,”এই জন্যেই তো আমেরিকা চলে যাচ্ছি, মিশেলকে খালি ক্রিম টা পাঠিয়ে নেই না। ওইদেশে কোন লোডশেডিং নাই।“ আমি মাথা নেড়ে তৎক্ষণাৎ একমত হয়ে গেলাম। ক্যাডেট কলেজে চার্জার জাতীয় কিছু নিজের কাছে রাখা রীতিমতো মৃত্যুদণ্ড যোগ্য অপরাধ। অতএব হাল্কাপাতলা চিলাচিল্লি করে সুবোধ বালিকার মতো আমরা শুয়ে পড়লাম। মৌসুমি অবশ্য হাল ছেড়ে দেবার পাত্রীই নয়, অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়েই ইরার বিছানা থেকে সে ক্রিম নিয়ে ঘষতে লাগলো। টুকটাক দুয়েকটা কথার পর সব চুপচাপ।হঠাৎ করেই শুনতে পেলাম শব্দটা। বহুদূর থেকে ভেসে আসছে, যেন কোন অশরীরী আত্মা গভীর বেদনায় আর্তনাদ করে চলেছে। নিজের অজান্তেই কেঁপে উঠলাম একবার। তাম্মি ইতোমধ্যেই ফিসফিস করে জানিয়ে দিলো, কাছেই কোন এক লাল ইটের বিল্ডিঙে নাকি জয়নাল হাজারীর টর্চার সেল ছিল। একথা শোনার পরে আমাদেরর ক্যাডেট সত্তা আমাদের আর বেডে শুয়ে থাকতে দিলো না। মৌসুমির নেতৃত্বে আমরা পা টিপে টিপে চললাম শব্দের উৎসের দিকে। একেবারে কোণার রুম থেকে আসছে মনে হল শব্দটা। যতরকম দোয়াদরুদ জানা আছে সব পড়ে ফুঁ দিয়ে এগিয়ে চলছি, অন্ধকারে দেয়াল ধরে ধরে এগোতে হচ্ছে। এত ভয়ের মধ্যেও ইরাটার ফাজলামো আর গেলোনা, ও বললো আর একমাস পর লোডশেডিং হলেও আর সমস্যা হবেনা, তখন আমরা মৌসুমির রূপের আলোতেই পথ চলতে পারবো, যে হারে ক্রিম ডলছে।  ধীরে ধীরে শব্দের একদম কাছাকাছি পৌঁছে গেছি আমরা, দরজায় দাঁড়িয়ে স্পষ্টই বুঝতে পারলাম ‘জিনিস’টা রুমের ভেতরেই আছে। ওই রুমের বন্ধুদের বাঁচাতে দরজা ভেঙ্গে ঢুকে পড়ব নাকি ঘুরে দৌড় দিবো ভাবতে ভাবতেই মৌসুমি দরজার নবে হাত রেখে বললো,” এতো ভয়ের কি আছে? আমরা না ক্যাডেট!” বন্ধুগরবে আমি রীতিমতো শিহরিত, মুহূর্তেই সব ভয় ঝেড়ে ফেলে ‘ইয়া আলি’ বলে সজোরে দরজা খুলে ঢুকে পড়লাম আমরা। সাথে সাথেই রুমের সবকটা মেয়ে তারস্বরে চিৎকার আরম্ভ করলো। ঠিক ওই মুহূর্তেই ইলেক্ট্রিসিটি চলে আসায় রুমে ফকফকে আলো, হতভম্ব আমি মৌসুমির দিকে তাকাতেই বুঝে গেলাম ব্যপারটা।হলো, ওই রুমের এক বন্ধু রুমমেটদের মাঝে আনন্দ বিতরণের উদ্দেশ্যে একটি গান গাইছিলো, কিন্তু তার সঙ্গীতবিষয়ক অপূর্ব(!) দক্ষতার কারণে আমরা সেটাকে অশরীরীর  হাহাকার ভেবে ভুল করেছি।  আর অন্ধকারে ক্রিমের পরিবর্তে ইরার জুতার কালির টিউব নিয়ে মুখে দলাইমালাই করবার কারণে মৌসুমিকে দেখে আমাদের সবার হার্টে স্থায়ী সমস্যা হয়ে গেছে! রুমে ফিরে পরবর্তী আধাঘণ্টায় কারেন্টের উদ্দেশ্যে মৌসুমি যে বাছাবাছা গালিগুলো দিলো না! ইলেক্ট্রসিটির কান থাকলে অন্তত সাত দিন আমাদের ক্যাডেট কলেজে টানা লোডশেডিং চলতো, আমি লিখে দিতে পারি