Tuesday 1 July 2014

ডিম ফ্রাই আর টুকটুকি

ডিম ফ্রাই, ডিম ফ্রাই, ডিম ফ্রাই। ডিম ফ্রাই ছাড়া আর কিচ্ছু বোঝে না টুকটুকি। উঠতে, বসতে, ঘুরতে, ফিরতে টুকটুকির ডিম ফ্রাই খাওয়া চাই-ই চাই।
ডিম ফ্রাই ছাড়া অন্য কোনো খাবার দেখলেই মাথা ঘুরে ওঠে টুকটুকির। ডিম ছাড়া দুনিয়ার আর সব খাবার তার অপছন্দের। তাই তো বাবা রোজ ১০টা করে ডিম কিনে রাখেন ফ্রিজে। বাবাকে ডিম আনতে দেখলেই টুকটুকি খুশিতে এক লাফে বাবার কোলে গিয়ে ওঠে।

কিন্তু টুকটুকির মা খুবই চিন্তায় পড়ে গেলেন। ডিম ছাড়া অন্য যে কোনো খাবার সামনে আনলেই টুকটুকি অজ্ঞান হয়ে যায়। একরোখা এই পুঁচকে মেয়ে ডিম ফ্রাই খাবে-ই খাবে। অবাক করা ব্যাপার, যদি কোনো মেহমানও বাসায় বেড়াতে আসে, তাদেরও চকলেটের বদলে টুকটুকির জন্য ডিম আনতে হয়। নয়তো টুকটুকি ভ্যাঁ করে কেঁদে পুরো ঘর মাথায় তোলে। আর বাবা তো চকলেটের বদলে ডিম-ই নিয়ে আসেন।
বাবা-মেয়ের কাণ্ড দেখে দিনদিন টুকটুকির মায়ের রাগ আকাশে উঠতে থাকে। মা অবশেষে বাবাকে বলেন, “বুঝি না বাপু, তুমি কী শুরু করলে এ সব! মেয়ে যা বলছে, তাই করছ। তোমারও কি জ্ঞানবুদ্ধি লোপ পেয়েছে? মেয়ে কি শুধু ডিম ফ্রাই খেয়ে বড় হবে? এই অভ্যাস কি যাবে কখনও?  আজ থেকে তুমি আর তোমার মেয়ে জানো সব, আমি কিছু জানি না। এমন চলতে থাকলে লোকে শেষে আমাদের ঠিক পাগল বলবে।”
মা বাবাকে বকাঝকা দিয়ে ঘরের দরজা দিলেন বন্ধ করে। বাবার মনটা এক্কেবারে খারাপ হয়ে গেল।
বাবা পুঁচকে টুকটুকিকে কোলে নিয়ে বললেন, “কী করি মামণি এখন? আজ ডিম ফ্রাই করবে কে? মা যে খেপেছে!”
টুকটুকি উত্তরে বলল, “বাবা তুমি চিন্তা করো না। আজ আমি আর তুমি মিলেই ডিম ফ্রাই করব। মামণি কীভাবে রান্না করে, আমি দেখেছি।”
যেমনি কথা তেমনি কাজ শুরু করল ওরা। বাবা-মেয়ে মিলে লেগে গেল ডিম ফ্রাই করতে, মানে ডিম ভাজতে।
কিন্তু তাই কি আর ওরা পারে? যেমনি চুলোয় ডিম ফেটে ফ্রাই করতে গেল, কী যে হতে লাগল ডিমগুলোর! যেন একটুও ডিম ফ্রাই হতে চায় না ওরা। খালি এদিক ওদিক লাফিয়ে পড়তে লাগল। একটা ডিমও পড়ল না ফ্রাইপ্যানে!
পরপর দশটা ডিম গেল গোল্লায়। কোনোটি গেল চুলোর নিচে, কোনেটি মেঝেতে, কোনেটি গেল এক্কেবারে টুকটুকির মুখে!
কিছুক্ষণ পর মা এলেন। সব দেখেশুনে তো তার মাথায় হাত। এ কী অবস্থা রান্নাঘরের! বাপ-বেটিকে রান্নাঘর থেকেই দিলেন খেদিয়ে, “ডিম ফ্রাই কেউ এভাবে করে নাকি? তোমরা বাপ-বেটি মিলে তো উল্টো আমার রান্নাঘরটাই ডিম ফ্রাই করে দিলে। বেরোয়, আমি করে দিচ্ছি ডিম ফ্রাই।”
তারপর আর কী, মা-ই টুকটুকিকে ডিম ফ্রাই করে দিলেন। আর দশ-দশটা ডিম গোল্লায় দিয়ে টুকটুকি মায়ের বানানো ডিম ফ্রাই মজাসে খেল।